প্রতি বর্গফুটে একটি ফ্ল্যাটের নির্মাণ খরচ কত ?

প্রতি বর্গফুটে একটি ফ্ল্যাটের নির্মাণ খরচ কত ?


প্রতি বর্গফুটে একটি ফ্ল্যাটের নির্মাণ খরচ কত এই প্রশ্নের উত্তর কিছুটা জটিল। নির্মাণ খরচ সুনির্দিষ্ট করে বলা যাবে না,তবে সামগ্রিক ভাবে এই বিষয়ে একটা ধারনা দেওয়া যেতে পারে।প্রতি বর্গফুটে নির্মাণ খরচ মূলত নির্ভর করে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করে ডেভেলপার কোম্পানী কেমন কোয়ালিটির নির্মাণ সামগ্রী ও হেভি ইকুইপমেন্ট (লিফট, জেনারেটর, পাম্প ও সাব স্টেশন) ব্যবহার করে বাড়িটি নির্মাণ করবে তার উপর।
"প্রতি বর্গফুটে একটি ফ্ল্যাটের নির্মাণ খরচ কত ?"
সাধারণত ঢাকা শহরের প্রথম সারির রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানগুলো যে ধরনের নির্মাণ সামগ্রী ও হেভি ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করে তার উপর ভিত্তি করে বলা যায় একটি ৫ কাঠা জমিতে আট তালা বিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণ করলে প্রতি স্কয়ার ফিটের খরচ হবে দুই থেকে আড়াই হাজার ২০০-০০ টাকা(মার্চ ২০)।এই টাকার মধ্যে রিয়েল এস্টেট কোম্পানীর যাবতীয় খরচ অন্তর্ভুক্ত। এবার আপনার মনে একটা প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে কোন ডেভলপার কোম্পানী যদি পার স্কয়ার ফিট ০০০ টাকা করে বিক্রি করে,তবে তারা কি প্রতি স্কয়ার ফিটে (২০০০০০) সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাভ করলো।না বিষয়টা মোটেও এরকম না। এখানে শুধুমাত্র নির্মাণ খরচ উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু ডেভলপার কোম্পানী প্রতি স্কয়ার ফিটে কত টাকা ইনভেস্ট হয় তা জানতে হলে আরো বিস্তারিত জানা প্রয়োজন ।
ডেভলপার কোম্পানী গুল জমির মালিকের সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চার চুক্তির মাধ্যমে বাড়ি নির্মাণ করে থাকে । মনে করুন একটি ০৫ কাঠার জমিতে আট তলা বিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণের জন্য ডেভলপার কোম্পানী জমির মালিকের সাথে ৫০% রেশিওতে চুক্তিবদ্ধ হলো।এখানে জমির মালিক নির্মিত বাড়ির ৫০% এবং বাকি ৫০% ডেভলপার কোম্পানী পাবে । ডেভলপার কোম্পানী শুধুমাত্র তার বরাদ্দকৃত অংশটুকু (৫০%)ভিন্ন ভিন্ন ক্রেতার কাছে বিক্রি করতে পারবে ।কিন্তু তাকে জমির মালিকের অংশ সহ সম্পূর্ণ বাড়ি নির্মাণ করতে হব।
কাজেই এই দুই থেকে আড়াই হাজার টাকার সাথে সম পরিমাণ টাকা যোগ করতে হবে কারণ ডেভেলপার কোম্পানীকে জমির মালিকের বরাদ্দকৃত অংশটুকু ও নির্মাণ করে দিতে হবে।সুতরাং দেখা যাচ্ছে প্রতি বর্গফুটে বিক্রয় খরচ দাঁড়াচ্ছে চার থেকে পাঁচ হাজার(৪০০০-৫০০০)টাকা ।তার সাথে আরো কিছু টাকা যোগ হতে পারে। ডেভলপার কোম্পানী গুলো জমির মালিকের সাথে জয়েন ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট এর সময় সাইনিং মানি দিয়ে থাকে ।যা জমির বর্তমান ভ্যালুর উপর নির্ভর করে ।উক্ত জমিতে যদি কাঠা প্রতি ১৮ লক্ষ করে টাকা দিতে হয় তবে ডেভেলপার কোম্পানীকে(০৫) পাঁচ কাঠার জন্য আরো ‌৯০ লক্ষ টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। জয়েন্ট ভেঞ্চার চুক্তি অনুযায়ী ডেভলপার কোম্পানীর বরাদ্দকৃত অংশটুকু যতোটুকু বিক্রয় করতে পারবে তা দিয়ে ৯০ লক্ষ টাকা কে ভাগ করলে পার স্কয়ার ফিট কত টাকা সাইনিং মানি বাবদ ইনভেস্ট করতে হলো তা হিসাব করা যাবে। মনে করুন বাড়িতে প্রতিটি ফ্লোরে ২০০০ স্কয়ার ফিট করে আটটি(০৮ )ফ্লোরে ১৬০০০ স্কয়ার ফিট নির্মাণ হলো ।এখানে ডেভলপার কোম্পানী ৮০০০ স্কয়ার ফিট বিক্রয় করতে পারবে।আর বাকি ৮০০০ স্কয়ার ফিট পাবে জমির মালিক । সাইনিং মানি ৯০ লক্ষ টাকা কে ৮০০০ স্কয়ার ফিট দিয়ে ভাগ করলে প্রতি স্কয়ার ফিটে সাইনিং মানি বাবদ ইনভেস্ট হবে ১১২৫ টাকা।
মোট খরচ = সাইনিং মানি + নির্মাণ খরচ (ডেভলপার অংশ+জমির মালিকের অংশ)
মোট খরচ = ৯০,০০০০০+২,০০,০০০০০+২,০০,০০০০০=৪,৯০,০০০০০ টাকা
প্রতি বর্গফুটে ইনভেস্ট = ৪,৯০,০০০০০/৮০০০= ৬১২৫ টাকা

একটি ব্যাখ্যামূলক উদাহরণ দিলে বিষয়টি সহজে বুঝতে পারবেন।

প্রজেক্টের নাম : সানফ্লাওয়ার
জায়গার পরিমাণ :৫ কাঠা (৩৬০০ বর্গফুটে)
প্রতি কাঠা সাইনিং মানি :১৮,০০০০০ টাকা
৫ কাঠার সাইনিং মানি :১৮,০০০০০x৫=৯০,০০০০০ টাকা
মোট ফ্লোর সংখ্যা। :০৮ টি
প্রতি ফ্লোরে নির্মাণ এরিয়া :২০০০ বর্গফুট
৮টি ফ্লোরে নির্মাণ এরিয়া :২০০০x ৮= ১৬০০০ বর্গফুট
ডেভলপার কোম্পানী পাবে :৮০০০ বর্গফুট (৫০%)
নির্মাণ খরচ (প্রতি বর্গফুটে) :২৫০০টাকা
নির্মাণ খরচ ডেভলপার অংশ ২৫০০x৮০০০=২০০০০০০০
নির্মাণ খরচ জমির মালিক অংশ ২৫০০x৮০০০=২০০০০০০
সর্বমোট নির্মাণ খরচ=২৫০০x১৬০০০=৪০০০০০০০
মোট খরচ =সাইনিং মানি +নির্মাণ খরচ(ডেভলপার অংশ+জমির মালিকের অংশ)
৯০,০০০০০+২,০০,০০০০০+২,০০,০০০০০০=৪,৯০,০০০০০ টাকা
প্রতি বর্গফুট ইনভেস্ট = ৪৯০০০০০০/৮০০০=৬১২৫ টাকা
"প্রতি বর্গফুটে একটি ফ্ল্যাটের নির্মাণ খরচ কত ?"
সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি এই প্রজেক্টে প্রতি স্কয়ার ফিটে ডেভলপার কোম্পানীর ইনভেস্ট হচ্ছে ৬১২৫ টাকা। তবে আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে অনেক ডেভেলপার কোম্পানি ৫০০০ টাকার নিচে প্রতি স্কয়ার ফিট বিক্রি করছে কিভাবে ? উপরে যে ব্যাখ্যামূলক উদাহরণটি দেওয়া হল সেখানে ডেভেলপার কোম্পানির সাথে জমির মালিকের ৫০% রেশিওতে চুক্তিবদ্ধ দেখানো হয়েছে ।কিন্তু জমি ভ্যালু যদি কম হয় তবে ডেভেলপার কোম্পানি গুলো ৫০% এর কম রেশিওতে জমির মালিককে দিয়ে থাকে। আবার নাম মাত্র সাইনিং মানি বা কোন সাইনিং মানি না দিয়েও চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকে । কাজেই ইমারত নির্মাণ বিধিমালা মেনে নিয়ে ডেভেলপার কোম্পানির ৫০০০ টাকা বা তার নিচেও প্রতি স্কয়ার ফিট বিক্রয় করা সম্ভব । তবে ঢাকা শহরের বেশিরভাগ প্রাইম লোকেশনে জমির মালিক কে সাইনিং মানি দিয়েই ডেভলপারদের জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট করতে হয় ।
ডেভলপার কোম্পানী বা এজেন্ট এই বিষয়টি কখনো আপনাকে ব্যাখ্যা করবে না ।আমাদের দেশে এমন অনেক সেল রিপ্রেজেন্টেটিভ আছে যারা এই বিষয়টি ভালো করে বুঝেনও না ।একজন সচেতন ক্রেতা হিসেবে আপনি ভালোভাবে বিষয়টি বুঝতে পারলে কোন ডেভলপার কোম্পানী আপনার কাছ থেকে প্রতি স্কয়ার ফিটে কত টাকা লাভ করছে তা সহজে হিসাব করতে পারবেন ।
এখানে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার আপনি কোন ফ্ল্যাট কিনলে তবে ফ্লাট এর পাশাপাশি ফ্ল্যাটের অনুপাতিক হারে আপনার জমিও কেনা হবে । কাজেই নির্মাণ খরচের বাইরে আপনি যে টাকা দিচ্ছেন সেটা ধরে নিতে হবে জমির মূল্য হিসেবে ।

"প্রতি বর্গফুটে একটি ফ্ল্যাটের নির্মাণ খরচ কত ?"